বিয়ের শপিং ও নানাবিধ কেনাকাটা

বিয়ের প্রস্তুতির খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শপিং। বিয়ের আগে সবারই কম-বেশি তাড়া থাকে। তাই এমন সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটাই বাদ পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই বিয়ের শপিংয়ে যাওয়ার আগে সুন্দর করে একটা চেকলিস্ট তৈরি করে নিবেন। এরপর সেই চেকলিস্ট ধরে ধরে শপিং করবেন। যাতে কোনো কিছু বাদ পড়ে না যায় এবং বিয়ের দিন যেন আবার শপিংমলে ছুটতে না হয়।

বিয়ের শপিং লিস্ট করার আগে অবশ্যই গুগল করে নিবেন। আর সবার সঙ্গে আলোচনা করে পছন্দমাফিক, রুচি অনুযায়ী এবং অবশ্যই সামর্থ অনুযায়ী কেনাকাটা করবেন। আপনার কাজকে একটু সহজ করার জন্য বর ও কনের বিয়ের শপিংয়ের একটা চেকলিস্ট নিচে তৈরি করে দেওয়া হলো। আরও বিস্তারিত জানার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ওয়েডিং বার্ডের ‘ওয়েডিং কস্টিউম ডিজাইনার ও এক্সপার্ট’ এর সঙ্গে (প্যাকেজ ও শর্ত প্রযোজ্য)।

বিয়ের শপিং লিস্ট (কনের জন্য):
১. লিপস্টিক
২. লিপ লাইনার
৩. নেইল পলিশ
৪. ফেস পাউডার
৫. আই লাইনার
৬. মাসকারা
৭. আই শ্যাডো বক্স
৮. মেকআপ বক্স ও মেকআপ রিমুভার
৯. চুলের শ্যাম্পু
১০. কন্ডিশনার
১১. নারিকেল তেল (কোকোনাট ওয়েল)
১২. সাবান
১৩. সাবান বক্স (সোপ বক্স)
১৪. পাউডার
১৫. পাউডার বক্স
১৬. টুথ পেস্ট
১৭. টুথ ব্রাশ
১৮. চিরুনি
১৯. তোয়ালে
২০. রুমাল
২১. কপালের টিপ
২২. আইব্রো পেন্সিল
২৩. কাজল
২৪. চুলের ক্লিপ
২৫. চুলের কাঁটা
২৬. খোপা
২৭. বডি লোশন
২৮. মেহেদী টিউব
২৯. গ্লিটার
৩০. রাখি
৩১. আয়না
৩২. বডি স্প্রে
৩৩. পারফিউম
৩৪. সেফটিপিন (গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার)
৩৫. চুড়ি (কাঁচ ও সিটি গোল্ডের)
৩৬. নাকের নথ
৩৭. আলতা
৩৮. কাপড়ের ফুল (চুলের জন্য)
৩৯. কুমকুম টিপ
৪০. ওড়না
৪১. স্যান্ডেল
৪২. ফেসওয়াশ
৪৩. শ্যাম্পু আফটার শাওয়ার
৪৪. সান স্ক্রিন বডি লোশন
৪৫. মাউথ ওয়াশ
৪৬. ফেস রিম
৪৭. হেয়ার স্ট্রেইটনার
৪৮. ওলিভওয়েল
৪৯. ময়েশ্চারাইজার
৫০. টোনার
৫১. মেকআপ রিমুভার
৫২. অর্নামেন্ট ব্যাগ (গহনার ব্যাগ)
৫৩. ঘড়ি
৫৪. ‍রুমের জন্য স্যান্ডেল (নরম হতে হবে)
৫৫. মিস্ট
৫৬. হেয়ার ড্রায়ার
৫৭. হেয়ার স্প্রে
৫৮. নেইল কাটার
৫৯. ক্যান্ডেল
৬০. লেইস
৬১. প্রথম শাড়ী (বেনারসি, ১টি)
৬২. দ্বিতীয় শাড়ী (জামদানি, ১টি)
৬৩. তৃতীয় শাড়ী-১টি
৬৪. চতুর্থ শাড়ী-১টি
৬৫. সুতি শাড়ী-২টি
৬৬. সালোয়ার কামিজ-২ সেট
৬৭. নাইট গাউন
৬৮. আন্ডার গার্মেন্টস
৬৯. ব্লাউজ
৭০. পেটিকোট
৭১. মোজা
৭২. ট্রলি ব্যাগ
৭৩. ভেনেটি ব্যাগ/পার্টি ব্যাগ
৭৪. গহনা (গোল্ড+ সিটি গোল্ড)
৭৫. জায়নামাজ
৭৬. তসবিহ
৭৭. কোরআন শরীফ
৭৮. বোরকা/স্কার্ফ
৭৯. আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারবর্গের জন্য পোশাক
৮০. রুচি, চাহিদা ও বিবেক অনুযায়ী অন্যান্য জিনিসপত্র।

বরের শপিং লিস্ট:
১. শেড়ওয়ানি
২. পাগড়ি
৩. নাগড়া
৪. পাঞ্জাবি
৫. ওড়না
৬. চোস্ত পাজামা
৭. স্যান্ডেল
৮. সিলভার কালার রাখি
৯. জরির মালা
১০. লুঙ্গি
১১. রুমাল
১২. গামছা
১৩. ব্লেজার
১৪. টাই
১৫. জুতা
১৬. পারফিউম
১৭. বডি স্প্রে
১৮. মোজা
১৯. গেঞ্জি
২০. ট্রাউজার
২১. ট্রলি ব্যাগ
২২. বেল্ট
২৩. শার্ট
২৪. প্যান্ট
২৫. শেভিং সেট
+ পছন্দ, প্রয়োজন, চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য জিনিসপত্র।

(বিয়ের শপিং সবার জন্য আনন্দের বন্যা বয়ে আনে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে করা হলেও অভিজ্ঞ এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত ও পরামর্শ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো জিনিস কি পরিমাণে এবং কার কার জন্য কিনতে হবে এসব আগে থেকে স্থির করা না হলে পরে এ নিয়ে জটিলতা ও মান অভিমানের জন্ম নেওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই সবকিছু বিচার বিশেস্নষণ করে কিভাবে বিয়ের শপিংকে সার্থক করা যায়।

সাধ আর সামথ্যের্র সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্ত উপকরণ সঠিক পরিমাণে কেনার জন্য একটা আনুমানিক বাজেট নিশ্চিত করা।

বর, কনে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারবর্গের সবার জন্য উপহার ও উপঢৌকন-এর আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করতে হবে।

কনের সাজ-সজ্জার প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন পরিধানের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ ও লেহেঙ্গা, গহনা, কসমেটিকস এবং অন্যান্য সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণসহ তালিকা উভয় পরিবার ও কনের সম্মতি সহ নিশ্চিত করতে হবে।
বরের পরিধেয় বস্ত্রাদি যেমন শেরওয়ানি কিংবা কমপিস্নট সু্যট, প্রসাধনী, জুতো-স্যান্ডেল, এগুলো বরের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের সাথে মানানসই করে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

বিয়ে পূর্ব ও বিয়ের পরবর্তী গিফটগুলোর জন্য আলাদা তালিকা তৈরি করতে হবে।

ক্রয় করা সকল পণ্যের মূল্য তালিকা যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে করে কোনো জিনিস বাদ পড়ল কিনা সে বিষয়ে যেমন নিশ্চিত হওয়া যাবে, তেমনি বাজেটের সাথে খরচের কোনো রকম পার্থক্য হলো কিনা সেটাও জানা যাবে।)

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কোথায় করবেন বিয়ের শপিং?
বাংলাদেশী বিয়ে মানেই শপিং-এর বিশাল সমারোহ। বিয়ের শপিং করার সময় অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। শপিং-এর পুরো লিস্ট পূরন হচ্ছে কি’না, কোন কিছু বাদ পড়ে গেল কি’না, সবকিছু মনমত ম্যাচিং হলো কি’না, বাজেটের মধ্যে শপিং শেষ করা গেল কি’না ইত্যাদিসহ আরো অনেক ধরনের প্রশ্ন জাগতে পারে বিয়ের শপিং নিয়ে। তবে কোত্থেকে বিয়ের শপিং করা উচিত, অথবা কোথায় শপিং-এর সব উপকরণ পাওয়া যাবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার ভেতরে বিয়ের শপিং-এর জন্য বেশ কিছু অপশন রয়েছে, সেগুলো নিয়েই আজকের পোস্ট।

১. যমুনা ফিউচার পার্ক (বসুন্ধরা)
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা যমুনা ফিউচার পার্ক শুধুমাত্র ঢাকা শহরই নয়, বরঞ্চ পুরো এশিয়ার মধ্যেই অন্যতম বড় শপিং সেন্টার। পুরো ভবনের আয়তন ১ লাখ ৫০ হাজার স্কয়ার মিটার। এত বিশাল জায়গা নিয়ে হওয়া শপিং সেন্টারে স্বাভাবিকভাবেই থাকবে অনেক পণ্যের সমারোহ। যমুনা ফিউচার পার্কও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশ-বিদেশের অনেক নামকরা ব্র্যান্ডের দোকান পাবেন এখানে। বিয়ের জন্য দরকারী যাবতীয় যত পণ্য আছে সবই মিলবে যমুনা ফিউচার পার্কে। পোশাক, গহনা, প্রসাধনী, গিফট সব ধরনের পণ্যের জন্যই প্রচুর দোকান আছে। দেখেশুনেও পণ্য কিনতে পারবেন নিজের বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে।

২. বসুন্ধরা সিটি শপিং মল
পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা শপিং মল অনেক দিন ধরেই ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার শপিং মল গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল, যমুনা ফিউচার পার্কের আবির্ভাবের পর তা দ্বিতীয় স্থানে চলে যায়। বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় শপিং মলগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের অবস্থান ১৩তম। বসুন্ধরা সিটির পুরো ৮ তলা জুড়েই বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দোকান আছে। এর মধ্যে প্রথম চার তলাতেই রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান। পাঁচ তলা এবং সাত তলা পুরোটা জুড়েই আছে গহনা আর জুতার দোকান। অর্থাৎ, বলতে গেলে বিয়ের জন্য দরকারী এমন কোন পণ্য নেই যা বসুন্ধরা সিটিতে পাওয়া যাবে না।বসুন্ধরা সিটির প্রায় সব দোকানই ফিক্সড প্রাইসে নিজেদের পণ্য বিক্রি করে, তবে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার পাওয়া যায়। কাজেই বাজেটের মধ্যে বিয়ের শপিং শেষ করার জন্যও বসুন্ধরা সিটি বেশ আদর্শ জায়গা।

৩. মিরপুর বেনারসী পল্লী
বিয়ের কনের সবথেকে বিখ্যাত পোশাক হচ্ছে শাড়ি। প্রায় প্রতিটি বাঙ্গালি মেয়েরই ইচ্ছা থাকে সুন্দর একটি শাড়ি পড়ে নিজেকে সাজিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসার। আর এই বিয়ের শাড়ির জন্য নিঃসন্দেহে সবথেকে সেরা জায়গা হচ্ছে মিরপুর বেনারসি পল্লী। ১৯৯৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা মিরপুর বেনারসী পল্লী অবস্থিত মিরপুর-১০ একদম মাঝামাঝি জায়গায়। নামে ‘বেনারসি পল্লী’ হলে সব ধরনের শাড়িই কিন্তু পাওয়া যায় এখানে। বরঞ্চ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা জামদানি, জর্জেট, সিল্ক ও কাতান সহ সব ধরনের শাড়ির বিশাল কালেকশন আছে বেনারসি পল্লীর দোকানগুলোয়। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দরদাম করে নিজের পছন্দমত শাড়ি সস্তায় কেনার জন্য মিরপুর বেনারসি পল্লীই সবথেকে সেরা জায়গা।

৪. নিউ মার্কেট
সায়েন্স ল্যাবের বিপরীতে, মিরপুর রোডে অবস্থিত নিউ মার্কেট সবার কাছেই অতিপরিচিত। ঢাকা শহরের সবথেকে পুরনো কেনাকাটার স্থানগুলোর মধ্যে নিউ মার্কেট অন্যতম। নিউ মার্কেট এরিয়ার বিভিন্ন দোকান থেকে বিয়ের সব ধরনের পণ্যই কিনতে পারবেন, সবথেকে কম দামে। বলা হয়ে থাকে যে বড় বড় শপিং মলের হাজার টাকা দামের পণ্য কয়েকশো টাকাতেই নিউ মার্কেট থেকে কেনা সম্ভব। সস্তায় যারা বিয়ের শপিং সেরে ফেলতে চান, তাদের জন্য নিউ মার্কেট একদমই আদর্শ স্থান।

৫. অনলাইন শপ
বর্তমানে অনলাইন ই-কমার্স শপগুলোর খ্যাতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য কেনার জন্য মার্কেটে গিয়ে ঘোরাঘুরির ঝামেলা না থাকায় ই-কমার্স শপগুলো থেকেই শপিং করতে সাচ্ছ্বন্দবোধ করেন অনেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে বিয়ের নানান ই-কমার্স শপ। কোন কষ্ট ছাড়া বিয়ের যাবতীয় সকল পণ্য এক জায়গায় পেতে অনেকের প্রথম পছন্দ অনলাইন। পোশাক, জুতো, জুয়েলারী, প্রসাধনীই শুধু নয়, বিয়ের যাবতীয় সকল সার্ভিসও অনলাইনে পাওয়া যায়। ডেকোরেশন, কেটারিং, গাড়ি ভাড়া, ফটোগ্রাফি, বিউটি-পার্লার ইত্যাদি সহ সব সার্ভিসও পাওয়া যায়।